আপনার হার্ট কি সুস্থ আছে? এই প্রশ্নটা হয়তো আমরা প্রায়ই এড়িয়ে যাই। কিন্তু হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে একটু সচেতন হলেই জীবনটা আরও সুন্দর হতে পারে! কোলেস্টেরল নিয়ে আমরা অনেক কথা শুনি, কিন্তু এটা শুধু “ভালো” বা “খারাপ” কোলেস্টেরলের গল্প নয়। এর পেছনে আছে জীবনধারা, খাবারের অভ্যাস, এমনকি জেনেটিক্সও। চলুন, সহজ ভাষায় জেনে নিই কীভাবে হার্টকে সুস্থ রাখবেন, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করবেন, আর কী কী পরীক্ষা আপনার জন্য জরুরি।

কোলেস্টেরল আসলে কী?
কোলেস্টেরল এক ধরনের চর্বি, যা আমাদের শরীরের জন্য জরুরি, কিন্তু বেশি হলে সমস্যা। সাধারণ লিপিড প্রোফাইল টেস্টে আমরা দেখি:
- টোটাল কোলেস্টেরল: শরীরে মোট কোলেস্টেরলের পরিমাণ।
- LDL (খারাপ কোলেস্টেরল): এটা বেশি হলে রক্তনালীতে প্ল্যাক জমতে পারে।
- HDL (ভালো কোলেস্টেরল): এটা হার্টের জন্য ভালো, কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে।
- ট্রাইগ্লিসারাইড: এটাও এক ধরনের চর্বি, যা বেশি হলে ঝুঁকি বাড়ে।
কিন্তু শুধু এই সংখ্যাগুলোই পুরো গল্প বলে না। আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা আছে, যেমন Apolipoprotein B (apoB) এবং Lipoprotein(a) (Lp(a)), যা হৃদরোগের ঝুঁকি আরও সঠিকভাবে বোঝায়। তাই পরের বার ডাক্তারের কাছে গেলে, শুধু সাধারণ লিপিড প্রোফাইল নয়, পুরো হার্ট হেলথ প্যানেল চান।

হার্টের যত্নে ৩টি সহজ পদক্ষেপ
হার্টকে সুস্থ রাখতে ছোট ছোট পরিবর্তনই অনেক কিছু বদলে দিতে পারে। এখানে ৩টি সহজ ও কার্যকরী উপায়:
১. ফাইবার দিয়ে কোলেস্টেরল কমান

দ্রবণীয় ফাইবার আপনার শরীরের জন্য একটা জাদুকরী স্পঞ্জের মতো। এটা কোলেস্টেরলের সঙ্গে জুড়ে শরীর থেকে বের করে দেয়। ফলে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমে।
কী খাবেন?
- সকালে ওটস বা বাকউইটের পোরিজ খান। একটু ফ্ল্যাক্স সিড, চিয়া সিড, ব্লুবেরি বা আপেল মিশিয়ে নিন।
- মসুর ডাল, ছোলা, বা সিলিয়াম হাস্ক যোগ করুন খাবারে।
- প্রতিদিন ৫-১০ গ্রাম ফাইবার খেলে LDL কোলেস্টেরল ১০% পর্যন্ত কমতে পারে।
অতিরিক্ত সুবিধা: ফাইবার শুধু কোলেস্টেরলই কমায় না, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেটের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে সাহায্য করে।

২. সঠিক চর্বি বেছে নিন
সব চর্বি খারাপ নয়! সঠিক চর্বি বেছে নিলে আপনার হার্ট আরও শক্তিশালী হবে।
কী করবেন?
- মাখন বা ঘি এড়িয়ে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন।
- অ্যাভোকাডো, বাদাম, কাজু, বা ফ্ল্যাক্স সিড খান।
- সপ্তাহে ২-৩ বার সামুদ্রিক মাছ (যেমন সালমন, সার্ডিন) খান। এগুলো HDL বাড়ায় এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়।
টিপ: লাল মাংস কমিয়ে মুরগি বা মাছ বেছে নিন। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম হবে।

৩. শরীর নাড়ান, মন শান্ত রাখুন
হার্ট একটা পেশি, আর ব্যায়াম এটাকে মজবুত করে। এছাড়া মানসিক চাপ কমানোও হার্টের জন্য দারুণ কাজ করে।
কীভাবে শুরু করবেন?
- সপ্তাহে ১৫০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং বা জগিং করুন।
- ২-৩ দিন ওজন বা শরীরচর্চা যোগ করুন।
- ধ্যান, যোগা, বা গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস করুন মানসিক চáp কমাতে।
মনে রাখুন: মানসিক চাপ বাড়লে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়তে পারে। তাই শরীরের পাশাপাশি মনের যত্ন নিন।
জেনেটিক্সের ভূমিকা
আপনার পরিবারে যদি হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের ইতিহাস থাকে, তাহলে ঝুঁকি একটু বেশি। তাই:
- বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল টেস্ট করান।
- প্রয়োজনে apoB বা Lp(a) টেস্ট করুন। এগুলো সাধারণ টেস্টে ধরা পড়ে না।
- ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে আগে থেকে পদক্ষেপ নিন।
শেষ কথা
আপনার হার্ট প্রতি মুহূর্তে কাজ করছে। তাই এর যত্ন নেওয়া আপনার দায়িত্ব। সঠিক খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, আর সঠিক টেস্টের মাধ্যমে হার্টকে সুস্থ রাখুন। আজ থেকেই ছোট একটা পরিবর্তন শুরু করুন, যেমন সকালে ওটস খাওয়া বা ১০ মিনিট হাঁটা। আপনার হার্ট আপনাকে ধন্যবাদ দেবে!
